ঢাকা Sunday, 08 September 2024

দিনাজপুরে নদীভাঙনে শঙ্কায় অর্ধশত পরিবার, নীরব পাউবো

দিনাজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশিত: 18:38, 16 July 2024

দিনাজপুরে নদীভাঙনে শঙ্কায় অর্ধশত পরিবার, নীরব পাউবো

বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির তেমন কোনো প্রভাব না থাকলেও বেড়েছে দেশের অধিকাংশ নদনদীর পানি। কারো কাছে বৃষ্টি আনন্দের হলেও দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে করতোয়া নদীতীরে বসবাস করা শত শত পরিবারের কাছে নদীর পানি বৃদ্ধি এবং বর্ষা মৌসুম মানেই আতংক। 

প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে এলেই নদীভাঙনে বাস্তুচ্যুত হওয়ার শঙ্কায় দিন কাটায় ঘোড়াঘাট পৌর এলাকার নাপিতপাড়া, হিন্দুপাড়া ও বড়গলি গ্রামের শতাধিক পরিবার। বিগত বছরগুলোতে এই তিনটি গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়ি নদীতে বিলীন হয়েছে।

এদিকে প্রতি বর্ষায় জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কাছে ধরনা দিয়েও কোনো সুফল পায়নি ভুক্তভোগী পরিবারগুলো। তাদের দেয়া আশ্বাসের অপেক্ষায় থেকে নদীভাঙনে হারিয়ে গেছে বাপ-দাদার ভিটেমাটি।

ভুক্তভোগীরা জানান, করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এ বছরও নদীতে হারিয়ে যাওয়ার পথে ১৫ থেকে ২০টি পরিবার। দিন এনে দিন খাওয়া নিম্ন আয়ের এসব অসহায় পরিবারের অধিকাংশ সদস্য হাট-বাজার ও রাস্তাঘাটে বুট-বাদাম বিক্রি করে সংসার চালান। মাথা গোঁজার শেষ ঠাঁইটুকু হারালে পথে বসতে হবে তাদের। 

গত বছর গ্রাম তিনটি পরিদর্শন করেন দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক। নদীভাঙন ঠেকাতে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাসও দিয়েছিলেন তিনি। তবে সেই আশ্বাসও বাস্তবায়নে রূপ নেয়নি।

গতকাল মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, গ্রামগুলোর ধার দিয়ে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে আশংকাজনক হারে। ভাঙনে নদীর পানি বাড়িঘরের ধার দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। এসব গ্রামে সাত-আটটি বাড়ির একাধিক ঘরের অর্ধেক পর্যন্ত ভেঙে নদীতে হারিয়ে গেছে। বাড়িগুলোর অবশিষ্ট ঘরে গরু-ছাগল নিয়ে কোনোমতে দিন কাটাচ্ছে অসহায় পরিবারগুলো। ভুক্তভোগী এসব পরিবারের অধিকাংশ মানুষ সনাতন ধর্মাবলম্বী।

ঘর হারানো বৃদ্ধা মালতি রানী বলেন, আমার আর কিছু নেই। ভাঙা ঘরে বৃষ্টিতে জল পড়তো। সেই জল পড়া ঘরও নদীতে হারিয়ে গেছে। কোথায় থাকবো? কি করবো? কিছুই ভেবে পাচ্ছি না। গরিবের কষ্ট কেউ দেখে না।

নিতাই সাহা বলেন, প্রতিবছর এমপিকে জানাই। মেয়রের কাছে যাই। পানি উন্নয়ন বোর্ডে চিঠি দিই। কিন্তু দিনশেষে ফলাফল শূন্য। সবাই শুধু আশা দিয়ে যায়। 

তিনি আরো বলেন, গত বছর এমপি এসে আমাদের অবস্থা দেখে গেছেন। ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। তবে তিনি যাওয়ার পর আমাদের শুধু চাল আর ডাল দেয়া হয়েছে। ঘরবাড়ি রক্ষায় কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

শান্তি রানী নামে আরেক গৃহবধূ বলেন, নদীর পানি আমাদের ঘরের নিচে দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। রাতে আমরা ভয়ে ঘুমাতে পারি না - এই কখন বুঝি ঘরসহ নদীতে ডুবে যাই। দিনে রান্না করতে গেলে আতঙ্কে থাকতে হয়। রান্নাঘর থেকে মাঝেমাঝে ভয়ে রান্না ছেড়ে পিছিয়ে আসি। সরকারের কাছে অনুরোধ করছি আমাদের বাঁচান।

ঘোড়াঘাট পৌরসভার মেয়র আব্দুস সাত্তার মিলন বলেন, দুদিন আগেও ভুক্তভোগীরা আমার কাছে এসেছিলেন। আমি আমাদের সংসদ সদস্যকে মুঠোফোনে বিষয়টি জানিয়েছি। পৌরসভার পক্ষ থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বারংবার চিঠি দেয়া হয়েছে। নদী শাসনের মাধ্যমে নদীভাঙন ঠেকাতে না পারলে পৌরসভার একাধিক ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি গ্রাম নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। আমি আবারো আমাদের সংসদ সদস্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

দিনাজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহম্মেদ বলেন, আমি এই জেলায় নতুন। পৌর মেয়রের কাছ থেকে বিষয়টি জেনেছি। আমি গ্রামগুলো পরিদর্শন করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো। সেখান থেকে অনুমোদন পেলেই ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে।